লাইলাতুল কদরের ফজিলত

লাইলাতুল কদর ইসলামের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র রাত, যা পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি। কুরআনে এই রাতকে “হাজার মাসের চেয়েও উত্তম” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। **লাইলাতুল কদর কী? “লাইলাতুল কদর” শব্দটি আরবি ভাষার, যার অর্থ হলো “সম্মানিত বা মহিমান্বিত রাত”। এটি এমন এক রাত, যখন মহান আল্লাহ তাঁর অসীম রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন। **আল-কদর সূরায় আল্লাহ তাআলা বলেন:** *"নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।"* (সুরা আল-কদর: ১-৩) এ থেকে বোঝা যায়, এ রাতের ইবাদত ৮৩ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়। --- **লাইলাতুল কদরের ফজিলত** ১. হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: - এই রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছরের ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়, যা মানুষের সাধারণ জীবনকালের চেয়েও বেশি। ২. কুরআন অবতীর্ণের রাত: - এ রাতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত। ৩. ফেরেশতাদের আগমন: - কদরের রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন এবং রহমত বিতরণ করেন। ৪. গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের বিশেষ সুযোগ: - রাসুল (সাঃ) বলেছেন, *"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"* (বুখারি ও মুসলিম) ৫. **শান্তি ও বরকতময় রাত:** - এই রাত সুবহে সাদিক পর্যন্ত শান্তি ও বরকতে পূর্ণ থাকে। --- **লাইলাতুল কদর কবে হয়?** লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে হাদিসে বলা হয়েছে, এটি রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) মধ্যে একটি হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: *"তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।"* (বুখারি, মুসলিম) অনেক ইসলামি পণ্ডিত ২৭তম রমজানকেই সম্ভাব্য লাইলাতুল কদর হিসেবে মনে করেন, তবে এটি নিশ্চিত নয়। তাই আমাদের শেষ দশকের প্রতিটি রাতকে ইবাদতে কাটানো উচিত। --- **লাইলাতুল কদরের আমল** ১. **নফল নামাজ আদায় করা:** - বেশি বেশি তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ পড়া। ২. **কুরআন তিলাওয়াত করা:** - এই রাতে কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। 3. **দোয়া ও ইস্তিগফার করা:** - হাদিসে বলা হয়েছে, নবী (সাঃ) লাইলাতুল কদরে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন: **اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني** **উচ্চারণ:** আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। **অর্থ:** হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন। ৪. **সাদকাহ ও দান-খয়রাত করা:** - এ রাতে দান-সদকা করা অনেক বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। ৫. **জিকির করা:** - আল্লাহর নাম বেশি বেশি স্মরণ করা ও দরুদ পাঠ করা। --- **🤲** লাইলাতুল কদর হল আল্লাহর বিশেষ রহমতের রাত, যেখানে গুনাহ মাফ, দোয়া কবুল ও অসংখ্য নেকির সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত এই রাতের ইবাদতকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া এবং বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন! -

Post a Comment

Previous Post Next Post