ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এখানে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. ডেঙ্গুর কারণ: ডেঙ্গু ভাইরাস চারটি পৃথক স্ট্রেইনের (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) মাধ্যমে হতে পারে। একবার আক্রান্ত হলে সেই স্ট্রেইনটির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরি হয়, কিন্তু অন্য স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়।
২. মশা দিয়ে সংক্রমণ: ডেঙ্গু ভাইরাসটি এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়, বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশা দিনের বেলায় কামড়ায়।
৩. লক্ষণসমূহ: ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেশী ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ত্বকে র্যাশ হয়। এজন্য এটি "ব্রেকবোন ফিভার" নামেও পরিচিত।
৪. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF): ডেঙ্গুর গুরুতর রূপ হল ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, যা রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং শক সৃষ্টি করতে পারে। এটি জীবনঘাতী হতে পারে।
৫. প্রতিরোধের উপায়: মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশারি ব্যবহার, মশা নিরোধক ক্রিম লাগানো, এবং মশা বাহিত এলাকাগুলি পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৬. চিকিৎসা: ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। বিশ্রাম, প্রচুর পানি পান করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে, অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৭. ডেঙ্গু হটস্পট: ডেঙ্গু সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় বেশি ছড়ায়, যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চল।
৮. গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ভাইরাস বিপজ্জনক হতে পারে এবং গর্ভস্থ শিশুর ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
৯. ডেঙ্গুর বৃদ্ধি: শহুরে এলাকায় এবং পানি জমা হওয়া স্থানে এডিস মশার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। এডিস মশা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে।
১০. টিকা: কিছু দেশ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে, তবে এর কার্যকারিতা ও প্রাপ্যতা এখনও সব জায়গায় সমান নয়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মশা নিধনের কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি।
ডেঙ্গু রোগের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিকার নেই, তবে লক্ষণগুলোর চিকিৎসা ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা হয়:
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
২. পর্যাপ্ত পানি পান
ডেঙ্গুর কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, তাই রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করানো উচিত। নারকেল পানি, ওরাল স্যালাইন এবং ফলের রস পান করা উপকারী।
৩. ব্যথা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণ
- সাধারণ ব্যথানাশক যেমন প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে।
- **অ্যাসপিরিন** বা **ইবুপ্রোফেন** ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এগুলি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. শারীরিক লক্ষণের পর্যবেক্ষণ
ডেঙ্গুর গুরুতর লক্ষণ যেমন তীব্র পেটব্যথা, রক্তক্ষরণ, বমি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন।
৫. হাসপাতালে ভর্তি
গুরুতর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে। শকের ঝুঁকি থাকলে, IV স্যালাইন দিয়ে শরীরে তরল সরবরাহ করা হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
৬. রক্তের পরিমাপ
ডেঙ্গুতে প্লেটলেট সংখ্যা কমে যেতে পারে, তাই প্লেটলেট পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। প্লেটলেট সংখ্যা খুব বেশি কমে গেলে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে।
৭. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের জন্য বিশেষ যত্ন
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তচাপ কমে যায় এবং রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। এ অবস্থায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
৮. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারির ব্যবহার, মশা তাড়ানোর ক্রিম এবং সম্পূর্ণ হাত-পা ঢাকা পোশাক পরা জরুরি।
- বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকা স্থানগুলো পরিষ্কার রাখা উচিত, যাতে মশার বংশবৃদ্ধি না হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন নিলে ডেঙ্গু রোগ সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় অবিলম্বে চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
bySHAKIL AHMED PHOTOGRAPHY
-
0


