মিথ্যা মায়া পড়া জীবন

শাকিল আহমেদ, শ্রীনাথদী ছোট গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের ছেলে। বাবা-মায়ের ছোটো সন্তান হিসেবে, শাকিলের জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাঁর জীবনের পথে প্রচুর কষ্ট ছিল, যার ফলে তাঁর জীবনটা একরকম ব্যর্থ মনে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই শাকিল পড়াশোনায় ভালো ছিল না। অন্য ছেলেমেয়েরা যখন পড়াশোনায় মন দিত, শাকিল তখন গ্রামের মাঠে সময় কাটাত। শাকিল অনেক চেষ্টা করেও তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে পারেননি। জীবনে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই, শাকিল একদিন বড় হয়ে গেল। কিছুটা সময় পর, শাকিল চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করতে থাকল, কিন্তু কোথাও সফল হলো না। যেখানেই গেল, সেখানে প্রত্যাখ্যাত হতে লাগল। দিন যত গড়াল, ততই তাঁর জীবনের হতাশা বেড়েই চলল। বাবা-মায়ের চোখের সামনে শাকিলের স্বপ্নগুলো ভেঙে পড়তে থাকল। তবে শাকিলের গল্প কষ্টের হলেও, এতে একটি শিক্ষাও আছে। জীবনের নানা ব্যর্থতা সত্ত্বেও, যদি কেউ মন থেকে চেষ্টা করে, তাহলে একদিন সফলতা আসবেই। শাকিল হয়তো জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু তাঁর ভেতরে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনা একদিন তাকে নতুন কিছু শিখতে ও বুঝতে সাহায্য করবে। শাকিলের কষ্টময় জীবনের গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে ব্যর্থতা মানেই জীবনের শেষ নয়, বরং এটি হতে পারে নতুন শুরুর সূচনা। শাকিল ছোটবেলা থেকেই শান্ত এবং সহজ সরল ছিল। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটতো তার প্রিয় আপনজনদের সাথে। বাবা-মা, ভাই-বোন আর কাছের কিছু বন্ধু—এদের সাথেই তার জীবন ছিল রঙিন। শাকিল সবসময় তার আপনজনদের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষের বেইমানি দেখে তার মনে এক অজানা কষ্ট বাসা বাঁধে। শাকিল ভাবতে লাগল, কীভাবে এমন একজন কাছের মানুষ তার সঙ্গে এত বড় বেইমানি করতে পারে। তবে শাকিল ধীরে ধীরে শিখে যায় যে, জীবনে সবকিছু হয়তো আমাদের ইচ্ছামতো হয় না। কেউ কেউ হয়তো আমাদের কষ্ট দেয়, কিন্তু সেই কষ্টের মধ্য দিয়েই আমরা জীবন সম্পর্কে বড় কিছু শিখি। শাকিল তার জীবনের এই অধ্যায়টি পেছনে ফেলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বুঝে নেন, বেইমান মানুষদের জন্য জীবনে স্থবির হয়ে থাকা ঠিক নয়; সামনে এগিয়ে যেতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে এবং সত্যিকারের যারা আপন, তাদের মূল্য দিতে হবে। সে বুঝল যে, মিথ্যা মায়া আর প্রতারণার পেছনে ছুটে তার জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু শাকিলের ভেতরে তখনও একটু আশার আলো ছিল—সে বুঝতে পেরেছিল যে, নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবারও নতুন করে শুরু করা সম্ভব। শাকিল প্রতিজ্ঞা করল যে, আর কখনো মিথ্যা মায়ার পেছনে ছুটবে না। এবার সে নিজের জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলবে, নিজের এবং সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য দেবে, যাতে তার জীবনের এলোমেলো অধ্যায় এক নতুন সূচনায় পরিণত হয়। শাকিল জীবন একটা ভালোবাসা চলে আসলো কিন্তু তার ভালোবাসার পরিনাম কি হলো। একদিন তার জীবনে আসে সোনালী এক সুগন্ধি—মায়া। মায়া ছিল এক মিষ্টি ও প্রীতিকর নারী, যার কথা, হাসি, এবং আচরণে কিছু বিশেষত্ব ছিল। প্রথম দেখাতেই শাকিল তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। মায়া তার সামনে নানা রকমের গল্প শোনাত, তার জীবন নিয়ে নানা ধরনের নাটকীয়তা কল্পনা করত। শাকিল ধীরে ধীরে মায়ার কথার মধ্যে গভীর বিশ্বাস স্থাপন করতে থাকে। সে ভাবতে থাকে, মায়ার এই আন্তরিকতা ও স্নেহ তার জীবনের খুঁজে পাওয়া বিশেষ কিছু। কিন্তু কিছুদিন পর শাকিল দেখতে পায়, মায়ার কথার মধ্যে সবসময় কোনো না কোনো অসঙ্গতি ছিল। মাঝে মাঝে তার কথায় ধরা পড়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য, কিন্তু শাকিল এ বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। সে বিশ্বাস করত, মায়ার যন্ত্রণার পেছনে নিশ্চয়ই কিছু বড় কারণ রয়েছে। একদিন, শাকিল মায়ার কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য চায়। মায়া তাকে আশ্বস্ত করে যে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, দিন যতই যেতে থাকে, কাজের কোনো অগ্রগতি হয় না এবং মায়ার ভাও সুরে শাকিল আরও বেশি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। মায়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও গল্প তাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে। শাকিল অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়, মায়ার মিথ্যা মায়ার পেছনে ছুটে সময় ব্যয় করা তার জন্য ক্ষতিকর। তার নিজের জীবন, স্বপ্ন, এবং উদ্দেশ্যগুলো উপেক্ষা হয়ে যাচ্ছে। মায়ার মিথ্যা কাহিনীর পেছনে ছুটতে ছুটতে শাকিলের নিজের জীবন এলোমেলো হয়ে উঠছে। একদিন, শাকিল সাহস করে মায়ার সাথে সমস্ত কিছু পরিষ্কারভাবে আলোচনা করে। মায়ার মিথ্যা মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং শাকিল উপলব্ধি করে, মায়ার এই মিথ্যা মায়া তার জীবনকে কতটা বিপথে নিয়ে গেছে। অবশেষে শাকিল নিজের শক্তি সংগ্রহ করে এবং মায়ার প্রভাব থেকে মুক্তি পায়। সে বুঝতে পারে যে, জীবনে কোন সম্পর্ক সত্যিকারের তা প্রমাণের জন্য, বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হয়। মায়ার মিথ্যা মায়া তাকে শিক্ষিত করেছে যে, সত্যিকারের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস কেবলমাত্র সৎ আচরণের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা তাকে জীবনের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয় এবং শাকিল তার জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে, যেখানে সে নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। একাকীত্ব জীবন ভালো শাকিলের শিহ্মা শাকিলের জীবন একাকীত্বের মধ্যে দিয়েও শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ক হতে পারে। তার জীবনের গল্প হতে পারে এমন এক যাত্রার, যেখানে একাকীত্ব তাকে শিখিয়েছে ধৈর্য, নিজের প্রতি আস্থা রাখা, এবং নিজের ক্ষমতাগুলো আবিষ্কার করা। শাকিল, ছোটবেলা থেকেই পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে একজন, কিন্তু বড় হওয়ার পর যখন সে একা হলো, তখন সে বুঝতে পারল যে একাকীত্ব মানেই দুর্বলতা নয়, বরং নিজেকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ। প্রথমে একা থাকা তাকে ভীত করেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে শাকিল তার কাজের দিকে মনোযোগ দিল—ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন এবং ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করে সে নিজের দক্ষতাকে বিকশিত করল। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিদিন আরও ভালোভাবে তৈরি করতে গিয়ে শাকিল অনুভব করল, একা থাকা তাকে তার নিজস্ব শক্তি ও প্রতিভা চেনার সময় দিয়েছে। একের পর এক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, শাকিল শিখল যে একাকীত্ব আসলে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাকে নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করেছে। তার এই যাত্রা হতে পারে এমন একটি গল্প, যা বলে দেয়—একাকীত্ব মাঝে মাঝে মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষক হয়ে দাঁড়ায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post